Saturday, November 25, 2023

ভারত-বাংলাদেশ সমুদ্রসীমা বিতর্ক, মহীসোপান নিয়ে বিতর্ক

ভারত-বাংলাদেশ সমুদ্রসীমা বিতর্ক, মহীসোপান নিয়ে বিতর্ক

বাংলাদেশ জাতিসংঘে মহীসোপানের যে দাবি দিয়েছে, সেটির আয়তন ৮ হাজার ৭শ বর্গকিলোমিটার। 

আর বিতর্কিত 'গ্রে এরিয়া' বা ধূসর এলাকার আয়তন ৭২০ বর্গকিলোমিটার।

ভারত আদালতের রায় মেনে তাদের বেইজলাইন সংশোধন করলে এই 'গ্রে এরিয়া' থাকে না।



বঙ্গোপসাগরে ভারত ও মিয়ানমারের সাথে সমুদ্রসীমার বিরোধ নিষ্পত্তি হয় আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে। ২০১১ সালে ইটলসের রায়ে মিয়ানমারের সঙ্গে এবং ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতের রায়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নির্ধারিত হয়।

সমুদ্রসীমানা নিয়ে দুটি রায়ের পর বাংলাদেশ যখন নতুন বেইজলাইন টেনে মহীসোপানের দাবি উপস্থাপন করে, তারপরই বর্তমান সংকটের শুরু।

বাংলাদেশ জাতিসংঘে মহীসোপানের দাবি প্রথম তুলে ধরে ২০১১ সালে। কিন্তু মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সীমানা বিরোধ নিষ্পত্তির পর মহীসোপানের ওই দাবি সংশোধন করে ২০২০ সালে নতুন করে কমিশনে জমা দেয়।

বাংলাদেশ সংশোধিত মহীসোপানের দাবি উপস্থাপনের ছয় মাসের মধ্যেই ভারত জাতিসংঘে চিঠি দিয়ে আপত্তি জানায়। ২০২১ সালের ১৬ই এপ্রিল ভারত জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক চিঠিটি দিয়ে তুলে ধরে।

ভারত সরকারের বক্তব্য হচ্ছে এটা গ্রে এরিয়ার (ধুসর এলাকা) ভেতরে পড়ে যাচ্ছে এবং ইন্ডিয়ার যে এক্সক্লুসিভ ইকনোমিক জোন তার ভেতরে পড়ে যাচ্ছে। তার মানে দু'শো নটিক্যাল মাইলের মধ্যে পড়ে যাচ্ছে।

ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে মহীসোপানের দাবি নিয়ে বর্তমান বিরোধের মূলে রয়েছে দু'দেশের বেইজলাইন। এ বেইজলাইন নিয়ে দুই দেশেরই পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ এবং আপত্তি আছে।

এ বেইজলাইন বা ভিত্তিরেখা ধরেই উপকূল থেকে সমূদ্রের ১২ নটিক্যাল মাইল টেরিটরিয়াল সী, ২শ নটিক্যাল মাইল বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং তারপর মহীসোপান পর্যন্ত পরিমাপ করা হয়।

দুদেশের বেইজলাইন সমুদ্র উপকূল জুড়ে বিভিন্ন অবস্থানে পয়েন্ট আকারে নির্ধারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশের সংশোধিত বেইজলাইনে ৫টি পয়েন্ট আছে আর ভারতের বেইজলাইনের ৮৯টি পয়েন্ট দ্বারা বিভক্ত।

ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সীমানা নির্ধারণের পর বাংলাদেশ ২০১৫ সালে বেইজলাইন সংশোধন করে। সেই বেইজলাইনের ভিত্তিতে ২০২০ সালের অক্টোবরে জাতিসংঘের কমিশনে মহীসোপানের দাবি উপস্থাপন করে। বাংলাদেশের নতুন বেইজলাইনের ২ ও ৫ নম্বর পয়েন্টের অবস্থান নিয়ে ভারতের আপত্তি।

বাংলাদেশের নতুন বেইজলাইনের ২ ও ৫ নম্বর পয়েন্টে ব্যাপারে ২০১৭ সালের ৩রা আগস্ট ভারত জাতিসংঘের কাছে একটি চিঠি লিখে সুনির্দিষ্ট করে আপত্তি জানায়।

ওই চিঠিতে বলা হয় নতুন বেইজলাইন ধরে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা টানলে বাংলাদেশের একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল ভারতের অংশে ঢুকে পড়ে, যেখানে একটি গ্রে এরিয়া বা ধুসর এলাকা চিহ্নিত রয়েছে।

২০১৪ সালে সমুদ্রসীমা নিয়ে আদালতের রায়ের পর বাংলাদেশ নতুন করে বেইজলাইন সংশোধন করে। সেই বেইজলাইন ধরে জাতিসংঘে মহীসোপানের দাবি সংশোধিত আকারে পেশ করে করে ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে।

বাংলাদেশের বক্তব্য হলো আদালতের রায় এবং আন্তর্জাতিক আইন ও বিধি মেনেই বাংলাদেশ বেইজলাইন নির্ধারণ করেছে।

বাংলাদেশ অভিযোগ করছে যে ভারত আদালতের রায়ের পর তাদের বেইজলাইন সংশোধন করেনি। ভারত বেইজলাইন সংশোধন না করায় গ্রে এরিয়ার সমস্যা রয়ে গেছে। বিশেষ করে ভারতের বেইজলাইনের ৮৭ ও ৮৯ নম্বর পয়েন্ট নিয়ে আপত্তি রয়েছে বাংলাদেশের।

বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নিয়ে শুরু থেকেই কাজ করছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম বিষয়াবলি ইউনিটের সচিব অবসরপ্রাপ্ত রিয়ার এ্যাডমিরাল মো. খুরশেদ আলম।

বিবিসিকে তিনি বলেন, আদালতের রায় অনুসরণ করে আইন-কানুন মেনেই বাংলাদেশ তাদের বেইজলাইন সংশোধন করেছে এবং মহীসোপানের সংশোধিত দাবি জাতিসংঘে উপস্থাপন করেছে।

"ভারতের বেইজলাইন যেটা বালাশোর উপকূল থেকে সোজা যে টানা হয়েছে, সেখানে ৮৭ নম্বর পয়েন্ট দশ কিলোমিটার সমুদ্রের ভেতর রয়েছে- যে কারণে গ্রে এরিয়া সৃষ্টি হয়।"

তিনি জানান, "এটা না থাকলেতো গ্রে এরিয়ারই সৃষ্টি হয় না। এবং পয়েন্ট ৮৯ এটা এখনো বাংলাদেশের সমূদ্রসীমার ২.৩ নটিক্যাল মাইল ভেতরে। এটা তারা এখনো সরায় নাই ২০০৯ সাল থেকে। আমরা এটাই বলেছি যে, তোমরা আপত্তি দিয়েছ, তার আগে তোমাদের কাজগুলো ঠিক করার দরকার ছিল।"

খুরশেদ আলম বলছেন, মহীসোপানের বিষয়টি এখন জাতিসংঘের কমিশনই নিস্পত্তি করবে। তবে কূটনৈতিক আলাপ-আলোচনাও অব্যাহত আছে ।

"কূটনৈতিকভাবে কথাবার্তা চলতেছে। আবার ওনারা চিঠি দিচ্ছে আমরাও দিচ্ছি। দেখা যাক এটা কূটনৈতিকভাবে যদি সমাধান হয়, ওনারা পয়েন্ট দুটো উঠিয়ে নেয় ফাইন। কিন্তু মহীসোপানের ব্যাপারে হয়তো কূটনৈতিকভাবে কিছু করার নাই, এটা জাতিসংঘ করবে।"

মহীসোপানের দাবি নিষ্পত্তি নিয়ে ভারতের সাবেক জরিপ কর্মকর্তা বিজন কুমার সাহা বলেন, আপত্তি যে যাই করুক মহীসোপানের সিদ্ধান্ত হবে বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে - এটা কেউ চাইলেই পাবে - বিষয়টা এমন নয়।

"দুটো দেশের বাউন্ডারি সেটা স্থল বা জলসীমায় হোক, সেটা একটা ম্যাটার অফ ডিমারকেশন।"

"কিন্তু এক্সক্লুসিভ ইকনোমিক জোন বা লিগ্যাল কন্টিনেন্টাল শেলফ এটা লজ অফ দা সী'তে পরিস্কারভাবে বলে দেয়া আছে - যে ২শ নটিক্যাল মাইলের পরে কতটুকু মহীসোপান পাওয়া যাবে, কী কী কারণে পাওয়া যাবে, কী করলে পাওয়া যাবে, কোথায় পাওয়া যাবে। নিশ্চয়ই কমিশন এসব বিষয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই সিদ্ধান্ত দেবেন।"

সাগরের মহীসোপান এলাকায় পানিতে মাছ ধরার অধিকার থাকে সব দেশের। কিন্তু মহীসোপানের মূল গুরুত্ব হলো মাটির নিচের সম্পদের কারণে। মহীসোপান যে দেশের অধিকারে থাকবে, সে দেশই ওই এলাকার মাটির নিচের সম্পদের মালিক হবে। মহীসোপানে তেল গ্যাস অনুসন্ধান এবং অন্য যেকোনো খনিজ পদার্থ উত্তোলন অনুসন্ধানের জন্য এর বিরোধ নিষ্পত্তির প্রয়োজন।

Source : bbc.com/bengali/news-58671740

মহীসোপান যে কারণে গুরুত্বপূর্ণ?

মহীসোপান মূলত একটি দেশের সীমানারই অংশ। ভূখণ্ডের মতো সাগরের এই মহীসোপান নানা দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ।

দেশের ভূখণ্ডের বেসলাইন থেকে লম্বাভাবে প্রথম ২০০ মাইল একচেটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চল বা ইইজেড। এখানে যেমন ওই দেশটি একচেটিয়াভাবে মৎস্য আহরণ করতে পারে। আবার সেখানকার সাগর তলে থাকা সকল খনিজ সম্পদের মালিকও ওই দেশ।

সেই সঙ্গে মহীসোপানের যে বর্ধিত অংশটি থাকে, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যেমন আরও ১৫০ মাইল, সেটিও আসলে ওই দেশের একটি বর্ধিত অংশ।

এখানে উদাহরণ দিয়ে বলা হয়, বর্ধিত অংশের পানি বাংলাদেশসহ অন্য দেশ মাছ ধরতে যেমন পারবে। ফলে তার মৎস্য আহরণের সীমানা আরও বিস্তৃত হচ্ছে।

কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, এই মহীসোপান এলাকায় পানির নীচে পাওয়া সব খনিজ সম্পদের মালিক হবে দেশটি। যেমন বাংলাদেশের একচেটিয়া অঞ্চলের ২০০ মাইল আর বর্ধিত মহীসোপানের ১৫০ মাইল- এই সাড়ে তিনশো মাইলে পাওয়া যেকোনো খনিজ সম্পদের মালিক হবে বাংলাদেশ। আবার এই পুরো এলাকায় বাংলাদেশের ট্রলার ইচ্ছেমত মাছও ধরতে পারবে।

মহীসোপান সব দেশের কাছেই বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সাধারণত মহীসোপান এলাকার ভেতরে তেল-গ্যাস বা অন্য খনিজ সম্পদ পাওয়া যায়, তা উত্তোলনে খরচ কম হয়ে থাকে। ফলে সেটি উত্তোলনযোগ্য এবং ব্যবহারযোগ্য হয়ে থাকে। ফলে এই সীমানা অর্থনৈতিকভাবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

এ কারণেই অনেক সময় মহীসোপানের এলাকা নিয়ে প্রতিবেশী বিভিন্ন দেশের মধ্যে বিরোধ দেখা যায়।

অ্যাডমিরাল (অব) খুরশীদ আলম বলছেন, ''খনিজ সম্পদের কারণেই মহীসোপানের এতো গুরুত্ব। তেল, গ্যাস, সালফার, মেটালিক মডিউল, কোবাল-সব কিছুর মালিক আপনি।''

যেমন এসব এলাকার মধ্যে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্লক রয়েছে।

২০১৪ সালে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ মীমাংসায় আন্তর্জাতিক সালিশ আদালতের এক রায়ে বাংলাদেশ নতুন প্রায় সাড়ে ১৯ হাজার বর্গকিলোমিটার সমুদ্র এলাকা পেয়েছে ।

এর মধ্য দিয়ে নিজস্ব সমুদ্রসীমার বাইরে মহীসোপানে এক বিরাট এলাকার ওপর বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

এই এলাকায় মৎস্য আহরণ ও সমুদ্রের তলদেশে প্রাকৃতিক সম্পদ অনুসন্ধান ও উত্তোলনে বাংলাদেশের অধিকার নিশ্চিত হয়েছে বলে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বলেছেন।

"এ রায়ের ফলে বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটারের বেশি টেরিটোরিয়াল সমুদ্র, ২০০ নটিক্যাল মাইল একচ্ছত্র অঞ্চল এবং চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানের তলদেশ অবস্থিত সব ধরণের প্রাণীজ ও অপ্রাণীজ সম্পদের উপর সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে।" বলেছিলেন তখনকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী।

বাংলাদেশ ও ভারতের মহীসোপান ইস্যু

২০১১ সালে জাতিসংঘে মহীসোপানের নিজেদের প্রাপ্য দাবি করে আবেদন করে বাংলাদেশ। যদিও ২০২০ সালের অক্টোবরে ওই দাবির বিষয়ে সংশোধনী দেয় ঢাকা।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব) মোঃ খুরশীদ আলম বলছেন, ''মহীসোপান সব দেশেরই একটা অধিকার। সব দেশে ২০০ মাইল পর্যন্ত ইইজেড পাবে, আর সাড়ে তিনশো মাইল পর্যন্ত মহীসোপান পাবে।''

বাংলাদেশ নিজেদের মহীসোপান এলাকা দাবি করে ২০১১ সালে জাতিসংঘের মহীসোপান নির্ধারণ বিষয়ক কমিশনে (সিএলসিএস) আবেদন করেছিল।

মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্র সীমা নির্ধারণ বিষয়ক আন্তর্জাতিক মামলায় যথাক্রমে ২০১২ এবং ২০১৪ সালে প্রদত্ত রায়ে বাংলাদেশ জয়লাভ করে।

সেই রায়ে মহীসোপানের সীমানা আলাদাভাবে নির্ধারণ করার কারণে ২০২০ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ সিএলসিএসে সংশোধনী জমা দেয়।

গত শুক্রবার ওই সীমানার ব্যাপারে আপত্তি দিয়ে ভারত বলছে, বাংলাদেশ ভূখণ্ডের যে বেসলাইনের ওপর ভিত্তি করে মহীসোপান নির্ধারণ করেছে, সেটির মাধ্যমে ভারতের মহীসোপানের একটি অংশ দাবি করছে বাংলাদেশ। এছাড়া সেখানে বঙ্গোপসাগরে থাকা গ্রে এরিয়া সম্পর্কে বাংলাদেশ কোন তথ্য দেয়নি।

এর আগে ভারত যে বেসলাইনের ভিত্তিতে মহীসোপানের দাবি তুলেছিল, সেটির বিরুদ্ধেও বাংলাদেশ ২০০৯ সালে আপত্তি জানিয়েছে। সেই আপত্তি এখনো রয়েছে।

যদিও বঙ্গোপসাগরের প্রতিবেশী আরেক দেশ মিয়ানমার বাংলাদেশের মহীসোপান দাবি ইস্যুতে কোন আপত্তি তোলেনি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব) মোঃ খুরশেদ আলম বলছেন, ''ভারতের আপত্তির ব্যাপারে আমি আইনগত জোরালো কোন ভিত্তি দেখছি না। কারণ আমাদের মহীসোপান আদালত থেকে ফয়সালা করে দেয়া হয়েছে। সুতরাং ভারতের আপত্তির কোন আইনগত ভিত্তি নেই বলেই আমি মনে করি। তারপরেও তাদের আপত্তির বিষয়টি পরীক্ষা নিরীক্ষা করে আমরা জাতিসংঘে জবাব দেবো।''

তিনি বলছেন, আপত্তির যেসব পয়েন্ট ভারত তুলে ধরেছে, তার সঙ্গে মহীসোপানের কোন সম্পর্ক নেই। কারণ পানির বিষয়ে আপত্তির সঙ্গে তো মহীসোপানের বিষয় মেলে না।

এই বিরোধের ব্যাপারে কারা সিদ্ধান্ত দেবে?

বাংলাদেশ ও ভারতের মহীসোপান সংক্রান্ত বিরোধের ব্যাপারে সুপারিশ দেবে জাতিসংঘের মহীসোপান নির্ধারণসংক্রান্ত কমিশন (সিএলসিএস)। দুই দেশের বক্তব্য বিচার বিশ্লেষণ করে সংস্থাটি তাদের সুপারিশ জানাবে।

সেই সুপারিশের ব্যাপারেও আবার আপত্তি জানানো যাবে। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যেহেতু আদালত সীমানা নির্ধারণ করে দিয়েছে, তার বাইরে বাংলাদেশের যাওয়ার সুযোগ নেই।

''কোর্টের রায় যেটা আমরা পেয়েছি, সেটাই আমরা পাবো। সেটার ওপরেই চেয়েছিলাম যে, তাদের (জাতিসংঘের) যে একটা রোল এখানে আছে, সেটাই যেন তারা পূর্ণ করে।'' বলছিলেন মি. আলম।

কোন দেশ মানতে রাজি না হলে তারা পুনর্বিবেচনার পর আবার সিএলসিএসে যেতে পারে। কিন্তু চূড়ান্ত যে সুপারিশ তারা দেবে, সেটা সব দেশকে মানতে হয়, সেটাই নিয়ম, বলছেন অ্যাডমিরাল খুরশীদ আলম।

এখানে আদালতের মতো কোন শুনানি হয় না। তবে সিএলসিএসের যে কমিটি রয়েছে, সেখানে সংশ্লিষ্ট দেশ তথ্য-প্রমাণসহ একটি প্রেজেন্টেশন দিতে পারে।

Source : bbc.com/bengali/news-56792341

ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে বিরোধ নিষ্পত্তি হওয়ার পর বাংলাদেশ ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটারের বেশি টেরিটোরিয়াল সমুদ্র, ২০০ নটিক্যাল মাইল একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানের তলদেশে অবস্থিত সব ধরনের প্রাণিজ ও অপ্রাণিজ সম্পদের ওপর সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে।

বাংলাদেশ-ভারত সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তির রায় পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বঙ্গোপসাগরের ৫০ বর্গ কিলোমিটারের একটি গ্রে এরিয়া নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালত নির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি। আদালত রায়ে বলেছেন, এ বিষয়টি দুই পক্ষ নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ঠিক করে নেবে। আন্তর্জাতিক আদালত সমতার ভিত্তিতে সমুদ্রসীমা ঠিক করায় এ গ্রে এরিয়ার সৃষ্টি হয়। আদালতের রায় অনুযায়ী, বাংলাদেশের সীমানার ৫০ বর্গ কিমি এরিয়া ভারতের মধ্যে ঢুকে গেছে বা ওভার ল্যাপিং হয়েছে। গ্রে এরিয়ার সমুদ্রের তলদেশের সম্পদের একক মালিকানা বাংলাদেশের। আর সমুদ্রের উপরিভাগের সম্পদের মালিকানা উভয় দেশের।

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক এবং ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক রুকসানা কিবরিয়া এ প্রতিবেদককে বলেন, ২০১৪ সালে সমুদ্রসীমা বিরোধ-সংক্রান্ত হেগের স্থায়ী আদালত থেকে বাংলাদেশ-ভারত সমুদ্রসীমা বিরোধের নিষ্পত্তি ঘটে। এ নিষ্পত্তি খুবই ন্যায়সংগত এবং বাংলাদেশের পক্ষেই ছিল। এটা থেকে মনে হয়, আমরা লাভবান হয়েছি। কিন্তু মানচিত্র দেখলে ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। যা হোক, ২০১৯ সালে বাংলাদেশ-ভারত দুই পক্ষ নিজেদের মধ্যে সমুদ্রবিরোধ নিষ্পত্তি করতে রাজি হয়। কিন্তু ওই ভারত সমঝোতার বিষয়ে পরে ভারত তার নিজের স্বার্থে আপত্তি জানিয়েছে।

সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির এ প্রতিবেদককে বলেন, আমার মনে হয়, দুই পক্ষ জাতীয় স্বার্থকে সামনে রেখেই এসব নিষ্পত্তি করবে, কিন্তু সেখানে হয়তো উভয় পক্ষই কমনগ্রাউন্ড খুঁজে পায়নি, সে কারণেই জাতিসংঘের কাছে যাওয়া। আমরা যেহেতু পারছি না, জাতিসংঘ সাহায্য করতে পারে। 
ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহকারী অধ্যাপক ড. কেএম আজম চৌধুরী এ প্রতিবেদককে বলেন, এটা এখন জাতিসংঘের সিএলসিএস কোর্টে নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। গ্রে এরিয়া সমুদ্রের মহীসোপানের একটি বিষয়। এ গ্রে এরিয়ায় বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমার রয়েছে। তাই এটা দুই দেশের মধ্যে সমাধান করা একটু ডিফিকাল্ট, এটা ত্রিদেশীয় একটা বিষয়। আর এখানে বাংলাদেশের কিন্তু আলাদা কোনো মহীসোপান নেই। গ্রে এরিয়ায় বাংলাদেশ পানি ছাড়া মাটির অংশটুকুও পাবে। অর্থাৎ ২০১৪ সালের রায় অনুযায়ী, গ্রে এরিয়ার মাটির নিচের সম্পদের অধিকারও বাংলাদেশের রয়েছে। এ বিষয় নিয়ে কোর্টের নিষ্পত্তির রায়ে উভয় পক্ষই লাভবান হবে।

shomoyeralo.com/details.php?id=225164