Ship Island/
শিপ চর হলো বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের সদ্য জেগে ওঠা দ্বীপ । এর অবস্হান হলো পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার শেষ প্রান্ত হতে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগরে । মানচিত্রে এর অবস্হান ২১.৭৮২২৯৪ ডিগ্রী অক্ষাংশএবং ৯০.৫৯২৯৫৩ ডিগ্রী দ্রাঘিমাংশ ।
Ship
Island / শিপ চর হলো পটুয়াখালী জেলার রাঙ্গাবালি উপজেলার চর মন্তাজ ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত
এলাকা হলেও এই দ্বীপ মাত্র কয়েক বছর হলো জেগে উঠেছে বলে জনবিরল । এখানে শুধুমাত্র জেলেরা
মাছ ধরার সময় বিশ্রাম নেয় । এই দ্বীপে এখনো তেমন গাছপালা জন্মায়নি । এই দ্বীপে এখন
ধানসি বা বুনো ধান বা ধানিঘাস জন্মাচ্ছে । ধানসি এর বৈজ্ঞানিক নাম Porteresia coarctata (Roxb.) । এটা ধান জাতীয় উদ্ভিদ । ধানসি মূলের মাধ্যমে বংশ বৃদ্ধি করে ।অপর দিকে ধান গাছ বীজের
মাধ্যমে বংশ বৃদ্ধি করে ।
এই ব্যতিক্রম ধর্মী উদ্ভিদ নতুন দ্বীপ বা চরে প্রথম দিকে জন্মায়
এবং নতুন দ্বীপের মাটিকে শক্ত বা মজবুত করে যাতে মাটি পানি বা বাতাসের মাধ্যমে বিলীন
না হয় । তারপর নতুন দ্বীপে উরি ঘাস জন্মায় । এর পর সুন্দর বনের শ্বাসমূল আছে এমন গাছ
যেমন : সুন্দরী, গেওয়া, কেওড়া গাছ জন্মায় । এসব গাছ নতুন দ্বীপকে সমুদ্রে বিলীন হতে
দেয় না । এসব গাছের পাতার লোভে কোন না কোনভাবে সুন্দর বনের প্রাণীরা এসব নতুন দ্বীপে
এসে হাজির হয়ে বংশ বৃদ্ধি করে নতুন ইকোসিস্টেম বা পরিবেশ বৈচিত্র সৃষ্টি করে নতুন দ্বীপকে
প্রান্তবন্ত করে তুলে ধরে ।
এই দ্বীপে যাওয়ার নিয়ম হলো :
১. ঢাকা হতে গলাচিপা উপজেলার শেষ প্রান্তের লঞ্চঘাটে যাওয়া ।
২.তারপর লঞ্চে করে চর মন্তাজ ইউনিয়নে যাওয়া ।
৩. চর মন্তাজে স্হানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ও ফরেস্ট অফিস হতে সোনার
চর দ্বীপ যাওয়ার অনুমিত নেওয়া ।
কারণ –
চরমন্তাজ হতে চর আন্ডা/আন্ডার চর দ্বীপ/ চর আন্ডা গ্রাম হয়ে সোনার
চর যেতে হয় । সোনার চর হতে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরেই শিপ চর ।
সোনার চর হলো অভয়ারণ্য । এখানে সুন্দরবনের জীব জন্তু ছাড়া মানুষ
থাকা নিষিদ্ধ । কারণ এটাকে ফরেস্ট অফিসের লোকরা পাহাড়া দেয় ।
সোনার চরের সমুদ্র সৈকত সেন্ট মার্টিন ও ছ্যাড়া দ্বীপের পর হলো বঙ্গোপসাগরের
সর্বশেষ সমুদ্র সৈকত । এটা অবিকল সুন্দরবনের মতো । শুধু বাঘ নেই ।
৪. চরমন্তাজের শেষ সীমা পেরিয়ে চর আন্ডা / আন্ডার চর নাম দ্বীপে
খেয়া নৌকায় করে যেতে হবে । চর আন্ডাতে একটা প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে । হাতে গোনা কয়েকটা
পাকা বাড়ি আছে । এটা চরমন্তাজ ইউনিয়নের গ্রাম । লোক সংখ্যা ২ হাজারের মতো ।
চর আন্ডা/ আন্ডার চর দ্বীপ এলাকা হওয়ায় এখানে শহরের মতো তেমন কোন
সুবিধা নেই । দ্বীপের বৈশিষ্ট্য অনেকটা সুন্দর বনের মতো । সুন্দরবনের গাছ এখানে রয়েছে
। সুন্দরবন ও গ্রামের ছোঁয়া দুটোই এখানে পাওয়া যায় ।
৫. চর আন্ডা / আন্ডার চরের
দক্ষিণের শেষ সীমা হতে ট্রলারে করে সোনার চরের ঘাটে যেতে হবে । যেতে সময় লাগে
২ মিনিট । সেখানে বন কর্মকর্তাদের কাছ হতে
অবস্হানের অনুমতি নিতে হবে । সোনার চরে রাতে থাকা নিষিদ্ধ ।
৬. সোনার চর সৈমুদ্র সৈকত হতে ১০ কিলোমিটার দূরে শিপ চরের অবস্হান
। মানচিত্রে এর অবস্হান
২১.৭৮২২৯৪ ডিগ্রী অক্ষাংশএবং ৯০.৫৯২৯৫৩ ডিগ্রী দ্রাঘিমাংশ ।
সুতরাং ট্রলারে
করে এই দ্বীপে যেতে হবে ।
শিপ চর-এর
বৈশিষ্ট্য :
১. শিপ চর একটা ফুটবল মাঠের সমান
আয়তনের ছোট দ্বীপ। লম্বায় বড় জোড় ৩০০ ফুট ও পাশে ৩০০ ফুট । বাকি অংশ
অধিকাংশ সময় বাকি অংশ সমুদ্রের পানির নিচে থাকে ।
২. দ্বীপটা দুইটা অংশে বিভক্ত । অনেকটা ধনুকের তীরের
মতো দেখতে । মাঝে একটা অগভীর খাল আছে ।
৩. সামান্য কিছু ছোট গাছ আছে ।
৪. শিপ চরের পর সমুদ্রে পটুয়াখালী জেলা বরাবর বাংলাদেশের
আর মাটি নেই ।
৫.বিশ্রাম নেওয়ার জন্য তাবুর বসানোর
পর ১০ ফুট দুরে সমুদ্রের জোয়ারের পানি দেখা যায় । সহজ কথা, এখানে আসলে চার দিকে পানি আর
একটা গভীর শূণ্যতা অনুভব হয় ।
৬. শুয়ে থাকলে সমুদ্রের গর্জন কানে ধরা দেয় ।
৭. অভিজ্ঞ জেলেদের সাথে থেকে রাতে পূর্ণিমার জোছনার
আলো উপভোগ করা যেতে পারে শিপ চরে কিছু সময় অবস্হান করে ।
৮. শীতকালে বঙ্গোপসাগরের চর বা দ্বীপ ভ্রমণ করা উত্তম
হওয়ায় শিপ চরে শীত কালে ভ্রমণ করতে যেতে হয় ।
৯. সমুদ্রের রূপালী আভা, পূর্ণিমার জোছনা, হাল্কা
হিম হিম বাতাস,ভোরের কুয়াশার চাঁদর, সকালের শিশির, সকাল ও বিকেলে একই সহানে সূয় উদয়
ও অস্ত পর্যবেক্ষণ, রাতে পরিস্কার আকাশের নক্ষত্রমালা দেখা ও সমুদ্রের টেউয়ের ছোঁয়া
পাওয়ার জন্য সর্বোত্তম স্হান হলো চর আন্ডা, সোনার চর ও শিপ চর ।
।
সাবধানতা
–
১.ট্রলারের ইঞ্জিন নষ্ট হয় সে দিকে সতর্ক থাকতে হবে
।
২. সমুদ্রে
৩ নং বিপদ সংকেত থাকলে ভ্রমণ হতে বিরত থাকতে হবে ।
৩. ভ্রমণের
জন্য লাইভ জ্যাকেট, তাবু ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রসহ নূন্যতম ১০ কেজি বস্তু নেওয়ার মতো
স্বাস্হ্য ও ধৈর্য্য রাখতে হবে ।
৪. স্হানীয়
জনগণের সাথে সৌহার্দপূর্ণ ব্যবহার বজায় রাখতে হবে ।
৫. এসব দ্বীপ
বা চরাঞ্চলের এর কাদামাটি খুব নরম হওয়ায় অনেক স্হানে কোমড় পরিমান ডুবে যাওয়ার সম্ভাবনা
রয়েছে । সুতরাং সতর্ক থাকতে হবে ।
৬. শব্দ দূষণ
করা যাবে না । ময়লা আবর্জনা যথাস্হানে ফেলতে হবে ।
আন্ডার চর,
সোনার চর ও শিপ চর গবেষক ও রোমাঞ্চপ্রিয়দের
কাছে গুরুত্বপূর্ণ । কারণ:
১. এগুলো
পরিবেশের জীবন্ত যাদুঘর ।
২. দ্বীপ
কীভাবে গড়ে ওঠে ও দ্বীপের জীব বৈচিত্র কীভাবে
সৃষ্টি হয় তা জানা যায় ।
৩. বায়ু দূষণ
ও আলোক দূষণ কম থাকায় মহাকাশ গবেষণা সহজতর হয় ।
৪. সমুদ্র
বিজ্ঞান বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করার উৎকৃষ্ট স্হান ।
৫. নেচার
ফটোগ্রাফির জন্য উত্তম স্হান ।
৬.যাদের টেলিস্কোপ
আছে ও ডিএসএলআর ক্যামেরা আছে তারা আকাশের গ্রহ নক্ষত্রের ছবি সুন্দরভাবে তুলে পারেন
এখানে।
৭. রোমাঞ্চপ্রিয়
ও ভ্রমণ প্রিয় লোকদের জন্য উৎকৃষ্ট স্হান ।
জেনে রাখা
ভাল:
১. শিপ চর
যেখানে অবস্হিত সেখানে এক সময় বড় একটা জাহাজ ডুবে যায় । জাহাজের চার পাশে পলি জমে দ্বীপটি
সৃষ্টি হয়েছে বলে দ্বীপটার নাম জেলেরা দেয় শিপ চর ।
২. আন্ডার
চর ( অফিসিয়াল নাম চর আন্ডা ) নাম হওয়ার কারণ দ্বীপটা দেখতে ডিমের মতো ।
৩. চর মন্তাজ
দ্বীপ/ ইউনিয়নের নাম হয়েছে জনৈক মন্তাজ নামক লোকের নাম অনুযায়ী ।
৪. সোনার
চরের নাম সোনার চর হওয়ার কারণ হলো :
সোনার চরের সৈকতের বালিতে সূর্যের আলো যখন প্রতিফলিত
হয় তখন সোনার চরের বালিকে সোনার মতই উজ্জ্বল মনে হয়। বলা যায় সূর্যের আলোতে
রাঙ্গানো এক স্বর্ণময় বালুকাবেলা ।
উপসংহার :
পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার শেষ সীমা হতে সমুদ্র পথে
সোনার চরের দূরত্ব ৮০ কিলোমিটার । সোনার চর হতে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে শিপ চর । এই
ভ্রমণ পথের ৮০ কিলোমিটার অনেকটা নদীতে লঞ্চ ভ্রমণের মতো । নতুনদের জন্য সোনার চর হতে শিপ চর সমুদ্র পথে ভ্রমণ অনেকটা বিপদ
সংকুল । কারণ এই ভ্রমণপথটা সমুদ্রে । সোনার চরের আগের জলপথ হলো বিভিন্ন নদী ও চরের
খাল দিয়ে লঞ্চ ভ্রমণ ।
যারা শিপ চর ভ্রমণ শেষে চর আন্ডা/ আন্ডার চরে পূর্ণিমায়
রাত্রি যাপন করেছেন তারা জীবনের শ্রেষ্ঠতম আনন্দ উপভোগ করেছেন বলে তাদের অভিজ্ঞতা ব্যক্ত
করেছেন ।
গবেষক ও রোমাঞ্চপ্রিয়বৃন্দ
আছেন যারা এসব দ্বীপ নিয়ে জানতে আগ্রহী ও গবেষণা করতে আগ্রহী তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার
করার জন্য অনুরোদ করছি ।