Saturday, June 26, 2021

বরগুনা দক্ষিণাঞ্চলের এক্সক্লুসিভ টুরিস্ট জোন

বরগুনার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যভরা স্থানগুলোর সঙ্গে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার কুয়াকাটা, গলাচিপার সোনার চর ও সুন্দরবন মিলে গড়ে উঠতে পারে একটি এক্সক্লুসিভ ট্যুরিস্ট জোন। বরগুনার তালতলী উপজেলার সোনাকাটায় রয়েছে ইকোপার্ক। এখানে ছোট-বড় ১২টি কিল্লা, ৭টি পুকুর রয়েছে। হরিণ বেষ্টনী, কুমির প্রজনন কেন্দ্র ও শুকর বেষ্টনীসহ একটি পিকনিক স্পট রয়েছে। ফকিরহাট বাজারের কাছাকাছি একটি ব্রিজের মাধ্যমে সোনাকাটা জঙ্গলে যাওয়া যায়। এটাই পর্যটকদের প্রবেশদ্বার। যোগাযোগ এবং থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা উন্নত হলে এটি হবে পর্যটনের চমৎকার স্থান।
সোনাকাটার পূর্বে কুয়াকাটা, পশ্চিমে সুন্দরবন ও হরিণবাড়িয়া, উত্তরে রাখাইন পল্লী এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। সোনাকাটা থেকেও উপভোগ করা যায় সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত। বঙ্গোপসাগরের তীরঘেঁষা বরগুনা জেলাটি ভৌগলিকভাবে দক্ষিণ বাংলার পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মধ্যস্থলে অবস্থিত। বরগুনার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যভরা স্থানগুলোর সঙ্গে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার কুয়াকাটা, গলাচিপার সোনার চর ও সুন্দরবন মিলে গড়ে উঠতে পারে একটি এক্সক্লুসিভ ট্যুরিস্ট জোন। বরগুনা জেলার পর্যটন স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো : সদর উপজেলার গোড়াপদ্মা, ছোনবুনিয়া, বাইনচটকির চর, খাকদোন নদীর মোহনা, তালতলীর রাখাইন পল্লী, আশারচরের সমুদ্র সৈকত, শুঁটকি পল্লী, সোনাকাটা, পাথরঘাটার লালদিয়ার চর। এছাড়া সুন্দরবনের কটকা, কচিখালী, ডিমের চর এবং দুবলার চর, কুয়াকাটা, সোনারচরসহ আরও কিছু স্থান বরগুনার একেবারে কাছে। কুয়াকাটা পটুয়াখালীর কলাপড়া উপজেলাতে অবস্থিত হলেও ভৌগোলিকভাবে ১৯৬৯ সালেও বরগুনা জেলার অন্তর্ভূক্ত ছিল। স্বাধীনতার পর কলাপাড়াকে পটুয়াখালীর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিন্তু সড়ক পথে বরগুনা থেকে কুয়াকাটার দুরত্ব পটুয়াখালীর তুলনায় কম। ফলে পর্যটকরা বরগুনা ভ্রমণের মধ্যে কুয়াকাটাকেও রাখতে পারেন। পাথরঘাটা উপজেলার সর্ব দক্ষিণে হরিণঘাটা চর। এ চরে রয়েছে হরিণ ও বন্য শুকর। রয়েছে দীর্ঘ সৈকত। সৈকতে দাড়িয়ে সূর্যাস্ত উপভোগ করা যায়। হরিণঘাটার গহীন ঝাউবনের নিচে বসে শুনতে পাবেন বাতাসের শো শো শব্দ। সমুদ্র দেখলে মনে হবে স্বপ্নের মাঝে রয়েছেন। রাতের আঁধারে হরিণের পাল এসে ঝাউবনের নিচে আশ্রয় নেয়। তাও দেখার মতো দৃশ্য। বরগুনার বেতাগী উপজেলায় রয়েছে মুঘল আমলের ঐতিহ্যবাহী বিবিচিনি শাহী মসজিদ। মূল ভূমি থেকে ৩০ ফুট উচ্চতায় স্থাপিত এক গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদটি নির্মাণ করেছেন আধ্যাত্মিক সাধক হযরত শাহ নেয়ামতুল্লাহ (র.)। ১৬৫৯ সালে পারস্য থেকে ইসলাম প্রচারের জন্য তিনি এ অঞ্চলে আসেন। সপ্তদশ শতাব্দীতে নির্মিত মসজিদটি দৈর্ঘ্যে ৩৩ ফুট ও প্রস্থে ৩৩ ফুট। দেয়াল ৬ ফুট চওড়া। সুন্দরবনের সব স্পটে যেতে হলে পুরো দিনটাই লঞ্চে ভ্রমণ করতে হবে। বরগুনা থেকে সুন্দরবন ভ্রমণ খুবই সহজ। সকালে গিয়ে বিকেলে বরগুনায় ফিরে আসা যায়। অথবা ২-৩ দিনের খাবার নিয়ে লঞ্চেও থাকা যায়। সুন্দরবনের কটকাসহ আশপাশের স্পটগুলো হলো কচিখালী, ডিমের চর ও দুবলার চর। ঝাঁক বাঁধা হরিণ ও বানরসহ ভাগ্য প্রসন্ন হলে দেখা যাবে রয়েল বেঙ্গল টাইগার। রাতে কটকার অভয়ারণ্যে ভিড় করে হরিণের পাল। কুয়াকাটাকে নতুন করে কাউকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কিছু নেই। সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দুটোই উপভোগ করা যায় এর সৈকতে। দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত, রাখাইন ঐতিহ্য, শুঁটকি পল্লী, ঝাউবন ও ইকোপার্কসহ নানা কারণেই কুয়াকাটা দেশের অন্যতম বৃহত্তম পর্যটন কেন্দ্র। কুয়াকাটা থেকে বরগুনার দূরত্ব অন্যান্য জেলার চেয়ে খুবই কম। তাই কুয়াকাটা ও বরগুনা মিলে একটি সমন্বিত পর্যটন এলাকা গড়ে উঠতে পারে। এছাড়াও বরগুনা সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে ভ্রমণ স্পট। গোড়াপদ্মায় গড়ে উঠেছে ছোট আকারের পর্যটন কেন্দ্র। বিকেলের অসংখ্য মানুষ এ সব স্থানে ভিড় করেন। বরগুনা শহর থেকে ৬ কিলোমিটার পশ্চিমে রয়েছে প্রাকৃতিক জঙ্গল। চারদিকে নদীবেষ্টিত ওই জঙ্গলে রয়েছে হরিণ। পিকনিকে জন্য এটি অপূর্ব সুন্দর স্পট। এ ছাড়া লবণগোলা, ছনবুনিয়া, কুমিরমারা ও বড়ইতলাসহ বিভিন্ন জায়গায় গড়ে উঠা ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট পর্যটনের জন্য আকর্ষণীয় স্থান। একসঙ্গে অনেক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে বরগুনা একটি অসাধারণ জায়গা। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করা গেলে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে অন্যান্য জায়গার তুলনায় বরগুনা কোনো অংশেই কম হবে না।এমন কি এই জেলাকে ঘিরে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে গড়ে উঠতে পারে একটি এক্সক্লুসিভ ট্যুরিস্ট জোন। উত্তাল সমুদ্রের ঢেউ আর একই স্থানে সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয়, দেখা যায় পটুয়াখালীর কুয়াকাটায়। আর কুয়াকাটার পশ্চিমে বরগুনার তালতলী উপজেলার সোনাকাটায় নির্জন গভীর অরণ্য। এখানে রয়েছে মায়াবী চিত্রা হরিণের পাশাপাশি মেছো বাঘ, কুমির,কাঠ বিড়ালিসহ বিভিন্ন বন্য প্রাণী। এরপরই পাথরঘাটা উপজেলার লালদিয়া যেখানে রয়েছে ম্যানগ্রোভ বন। কাঠের পাটাতনের ব্রিজ ধরে গভীর বনে হারিয়ে যাওয়ার সুযোগ। শুধু ব্রিজ নয়, টাওয়ারে উঠে বা ছোট নৌকা ভাড়া করে বন দেখার সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে এখানে। দক্ষিণে এ তিনটি পর্যটন কেন্দ্র পাশাপাশি হলেও দুটি নদী বিচ্ছিন্ন করেছে কেন্দ্রগুলোকে। আর একটি কেন্দ্র থেকে আরেকটিতে যাওয়ার নেই কোনো ব্যবস্থা। বিশখালী ও বলেশ্বর নদীর মোহনায় বঙ্গোপসাগরের উপকূলে এমন এক চমৎকার বন দাঁড়িয়ে আছে বরগুনার পাথরঘাটায়। হরিণঘাটার বন নামে পরিচিত এই বনে দিনদিন বেরে চলছে। ২০ হাজার একর জুড়ে দৃষ্টিনন্দন এই বনে প্রাকৃতিক কেওড়া, গেওয়াসহ সৃজিত সুন্দরী ও ঝাউবন। বন অধিদপ্তর ১৯৬৭ সালে হরিণঘাটা বন সম্প্রসারণে পরিকল্পিত বনায়ন শুরু করে। পরে ২০১৩ সালে এখানে ১০০ হেক্টর এলাকাজুড়ে সমৃদ্ধি কর্মসূচির আওতায় নতুন বন সৃজিত হয়। বনের ভেতরে পর্যটকদের পায়ে চলার জন্য তৈরি কর হয়েছিল (ফুট ট্রেইল) বা সেতু আর এই মায়ায়ই দর্শনার্থীদের টানছে এখানে। আর এই ফুট ট্রেইল এখন ভেঙ্গে নেই বললেই চলে। এখানে চলতে গেলে মৃত্যুর ঝুকি নিয়ে চলতে হয়। কারন, এই ফুট্রেইলের পায়ে চলার পথ নির্মাণের ফলে হরিণঘাটা বন আকর্ষণীয় পর্যটনের সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। বনের ভেতর উঁচু পিলারে তৈরি করা হয়েছে চার তলা ওয়াচ টাওয়ার যার উপর দাড়িয়ে মানুষ নিরাপদ ও স্বচ্ছন্দে বনের প্রাণ-প্রকৃতি ও সাগরতীর দর্শনের সুযোগ পাচ্ছে। বনের ভেতর নির্মাণ করা হয়েছে বিশ্রামাগার ও গোলঘর যেখানে পর্যটকরা বিশ্রাম নিতে পারে। এই বনের ভিতরের দৃশ্য দেখার জন্য ফুটট্রেইল নির্মান করার হয়েছে পর্যটকদের জন্য। হরিণঘাটা থেকে লালদিয়া সমুদ্রপাড় পর্যন্ত যেতে ৯৫০মিটার ফুট-ট্রে ব্রিজ, ৪টি পাকা গোলঘর, একটি ব্রিজ করা হয়েছে। ত্রিমুখী এই পর্যটন এলাকা সুন্দরবন ও কুয়াকাটার মাঝখানে। লালদিয়া, সোনাকাটা ও কুয়াকাটা নিয়ে সরকারের পর্যটন জোন করার পরিকল্পনা রয়েছে।

শেয়ার করুন

0 comments: