Sunday, November 15, 2020

আমি আকাশ দেখি : পর্ব-২

আমি আমার দুরবীন দিয়ে খুব ভালভাবেই এন্ড্রমিডা গ্যালাক্সিকে দেখে থাকি। আমাদের মিল্কিওয়ের প্রতিবেশী গ্যালাক্সির নাম এন্ড্রমিডা। এটিতে মিল্কিওয়ের থেকে বেশী তারা থাকে। (১ লিখে ১২ টা শুন্য দিলে যে সংখ্যা হয় তার সম পরিমান সূর্যের মতো নক্ষত্র নিয়ে একটা গ্যালাক্সি গঠিত হয়। আমরা যে গ্যালাক্সিতে বাস করছি তার নাম মিল্কিওয়ে।) আমার এই দুরবীন দিয়ে সবচেয়ে বেশী ভাল দেখা যায় আমাদের চাঁদ মামাকে। চাঁদ মামা হলেন উপগ্রহ। কারণ গ্রহের চার দিকে যেসব তারা ঘুরে তাদের উপগ্রহ বলা হয়। চাঁদ পৃথিবীর চার দিকে ঘুরে।
চাঁদ মামাকে ইদানিং আমার ভাগ্নে-ভাগ্নি আর ভাইপো তাদের জন্য কেনা দুরবীন দিয়ে দেখে। তাদের বয়স খুবই কম। তারা কোথায় যেনো শুনেছে মানুষ মরে গেলে নাকি মানুষ আকাশের তারা হয়ে যায় আর মৃত মানুষরা নাকি পৃথিবীর লোকদের এভাবেই নাকি দেখে। আর কাজের বুয়ার কাছে শুনেছে,পৃথিবী একটা মহিষের শিংয়ের উপর আছে। পৃথিবী ঘুরতে ঘুরতে যখন এক শিং থেকে আরেক শিংয়ে যায়, তখন ভূমিকম্প হয়। আমার এক ভাই ভূতত্ববিদ। সে খুব সুন্দর ভাবে এসব বিষয় বুঝিয়ে বলে বুয়ার কথা ভুল। তারপরও তারা বলে মামা তোমার কথা ঠিক না। রুপকথার বইয়ের কথাগুলো আর বুয়ার কথাগুলো ঠিক। আমি মনে করি, তারা যখন বড় হবে, তখন তারা নিজেরাই তাদের অনুসন্ধিৎসু মন দিয়ে সব বিচার করবে। আমরা চাই আমাদের ছেলেমেয়েরা বিজ্ঞানমনস্ক ও অনিসন্ধিসু মন নিয়ে বেড়ে উঠুক। সৃষ্টিকর্তার বিধানও অনিসন্ধিসু মন নিয়ে শিশুরা বেড়ে উঠুক : তারা কি তাদের উপরস্থিত আকাশের দিকে দৃষ্টিপাত করে না আমি কীভাবে তা নির্মাণ করেছি এবং সুশোভিত করেছি? তাতে কোন ছিদ্রও নেই। “(আল কুরআন, সুরা ক্বাফ : ৬) চাঁদ পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ এবং সৌর জগতের পঞ্চম বৃহৎ উপগ্রহ। পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে চাঁদের কেন্দ্রের গড় দূরত্ব হচ্ছে ৩৮৪,৪০৩ কিলোমিটার (২৩৮,৮৫৭ মাইল) যা পৃথিবীর ব্যাসের প্রায় ৩০ গুণ। চাঁদের ব্যাস ৩,৪৭৪ কিলোমিটার (২,১৫৯ মাইল) যা পৃথিবীর ব্যাসের এক-চতুর্থাংশের চেয়ে সামান্য বেশি। চাঁদের আয়তন পৃথিবীর আয়তনের ৫০ ভাগের ১ ভাগ। চাঁদই একমাত্র আকাশের বস্তু যাতে মানুষ ভ্রমণ করেছে। যার মাটিতে মানুষ হেঁটেছে। প্রথম যে বস্তুটি চাঁদের কাছ দিয়ে উড়ে যেতে সক্ষম হয়েছিল তা হল রাশিয়ার লুনা ১ নামক আকাশ যান। এই ঘটনা ১৯৫৯ সালে ঘটে। তারপর ১৯৬৬ সালে বাশিয়ার লুনা ৯ নামক আকাশ যান প্রথমবারের মত চাঁদের মাটিতে অবতরণ করে এবং লুনা ১০ আকাশ যান প্রথমবারের মত চাঁদের কক্ষপথ পরিক্রমণ করে। আমেরিকাও রাশিয়ার সাথে পাল্লা দিতে অ্যাপোলো প্রকল্প শুরু করে। আমেরিকা ১৯৬৯ সালে অ্যাপোলো-১১ আকাশ যান চাঁদের উদ্দেশ্যে পাঠায়। এর মাধ্যমে প্রথমবারের মত চাঁদে মানুষ অবতরণ করে। নীল আর্মস্ট্রং, বুজ আলড্রন এবং মাইকেল কলিংস্ অ্যাপোলো-১১ আকাশযানে করে চাঁদে যান। নীল আর্মস্ট্রং এবং বুজ আলড্রন ছিলেন প্রথম মানুষ যারা চাঁদে হেঁটছেন। পরে আরও ১০ জন লোক চাঁদে হেঁটেছেন। ১৯৬৯ থেকে ১৯৭২ সালের মধ্যে ছয়টি আকাশযান চাঁদের মাটিতে অবতরণ করে। অ্যাপোলো অভিযানের পর জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা চাঁদে মানুষ পাঠানোর সকল পরিকল্পনা ত্যাগ করে। ২০০৯ সালে প্রথম দিকে ভারত, যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগীতায় চন্দ্রযান নামে একটি আকাশযান চাঁদে পাঠায়। কিন্তু প্রকল্পটিতে সফল হতে ব্যর্থ হয়। মহাকাশযান চাঁদে পৌঁছার পর পরেই তার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কিন্তু অল্প সময়ে যে তথ্য পাঠিয়েছে তা মানব জাতিকে নতুন করে আশার আলো দেখিয়েছে। কারণ চাঁদে পানির অস্তিত্ব পাওয়ার তথ্য এটি দিয়েছে। এর ফলে মানুষ চাঁদে যেয়ে বাস করার মতো পানি সংগ্রহ করতে পারবে। এই তথ্য মানুষকে চাঁদে বাস করার ক্ষেত্রে আশার আলো দেখিয়েছে। (আমার বিজ্ঞান বিষয়ক এই ধারাবাহিক কলাম অনেকটা রোজনামচার আকারে ডায়েরীর পাতায় লেখেছি। মহাবিশ্ব সৃষ্টি সম্পর্কে বর্তমান সময়ের তথ্য জানার পাশাপাশি কীভাবে মানুষ আকাশকে জয় করেছে এবং আকাশের বিভিন্ন গ্রহে বসবাস করার প্রস্তুতি নিচ্ছে সে সম্পর্কে জানতে পারবেন। আশা করি আমার সাথেই থাকবেন)

শেয়ার করুন

0 comments: