Friday, October 2, 2020

লেখালেখি হোক ডায়েরী লেখার মত






 


আমাদের অনেকের মাঝে ডায়েরী লেখার অভ্যাস আছে। এসএসসি পাশ করেছে এবং এ্যানি ফ্রাংকের ডায়েরীর কথা শুনেনি এমন লোক কমই খুঁজে পাওয়া যাবে। এখনকার সময় ছোট ছোট লেখা মানুষের কাছে বেশ গ্রহণ যোগ্য হয়ে যাচ্ছে । আজকালকার দিনে ব্যস্ততার মধ্যে সবাই অল্প অবসরে, অফিসের কাজের ফাকে, যাতায়তের সময় সকলে ছোট ছোট আর্টিক্যাল বা লেখা পড়তে বেশী পছন্দ করে। এছাড়া প্রযুক্তিতে যোগ হওয়ায় ল্যাপটপ, আইপ্যাড বা স্মার্ট ফোনে বড় বড় লেখা থেকে ছোট ছোট লেখা অনেক বেশী গ্রহণ যোগ্য,আরামদায়ক ও আনন্দদায়ক। বড় ধরনের যে কোন আর্টিক্যাল বা লেখা দিনকে দিন সবার কাছে ধৈর্য হারা হয়ে যাচ্ছে। আমরা এখন এত বেশী তথ্যের মধ্যে প্রবেশ করতে পারছি যে কোনটা রেখে কোনটা পারব সে সময়টা বের করাটা অত্যন্ত কষ্টকর।অনেকটা শতাধিক টিবি চ্যানেল দেখার মত। দেখা যায় অনেক টিভি চ্যানেলের মধ্যে কোন চ্যানেলই ঠিকভাবে দেখা হয় না। তেমনি কোটি কোটি ওয়েব সাইট ও তথ্যের মহাসমুদ্রের তথ্যের ভিড়ে কোন আর্টিক্যালের জিস্ট বা মূলকথা ছাড়া বিস্তারিত বিবরণ পড়া এখনকার পাঠকদের জন্য ভয়াবহ কষ্টের বিষয়। ব্লগ, তথ্য ও আর্টিক্যাল ইত্যাদি আমরা লিখতে পারি ৩০০, ৫০০, ৮০০ ও ১০০০ শব্দে। এর চেয়ে বেশী শব্দের লেখা হবে নিজ দায়িত্বে। তবে লেখা গতিশীল ও সাবলীল হলে সমস্যা নেই। বইয়ের ক্ষেত্রে মনে হয় ১০,২০ বা ৩০ হাজার শব্দে হতে পারে। বইয়ের সাইজটাও অনেকে চিন্তা করেন ৩/৪ ঘন্টার মধ্যেই পাঠক যেন পড়ে শেষ করতে পারেন।
আমাদের যাদের ডায়েরী লেখার অভ্যাস আছে তারা প্রতিদিন ২০০/৩০০ শব্দের মত লিখে থাকি। ২০০/৩০০ শব্দ আশা করা যায় ৩০ মিনিট থেকে এক ঘণ্টার পরিশ্রমে লিখা যায়। যে কোন বিষয় মাথায় আসলে তার একটি আউটলাইন তৈরি করে আমরা যে কেউ ২০০/৩০০ শব্দ চট করে লিখে ফেলতে পারি। ডায়েরী লেখার মত প্রতিদিন নিজের কর্মকাণ্ডের বিষয়গুলির যে কোন কিছু কল্পনা করে আমরা লিখে ফেলতে পারি। প্রথমে আমাদের মনে যা আসে তাই লিখতে পারি। আমি আমার লেখার অভ্যাস শুরু করার আগে লেখা লেখি কিভাবে করা যায় তার উপর বেশ পড়াশোনা করেছি। তাদের সকলের মতামত একই, যা মনে আসে লিখতে থাক এবং লেখার অভ্যাস কর। লিখতে লিখতে এক সময় এক্সপার্টিজ গ্রো করবে।
আমি আমার টার্গেটে যে বিষয়টি সংযোজন করেছি তা হল প্রতিদিন যা মনে আসে তাই দিয়ে ৫০০ শব্দ লেখা। আর এ ধরনের কাজের সাথে ডায়েরী লেখার বিশেষ মিল আছে। আমি ক্যাডেট কলেজে পড়াশোনা করার সময় কিছু বন্ধুবান্ধবদের দেখে উৎসাহিত হয়ে ডায়েরী লেখা শুরু করি। আবার মিলিটারি একাডেমীতে ট্রেনিং এর অংশ হিসাবে প্রথম টার্মে ডায়েরী লিখি। অনেক দিন ডায়েরী লিখার অভ্যাস নাই। কিন্তু তার বদলে টুকটাক লেখার অভ্যাস করেছি। টার্গেট একটাই প্রতিদিন ৫০০ শব্দ লেখা ।এভাবে বছরে ১,৮২,৫০০ শব্দ লেখা সম্ভব। এতেই ভাল সাইজের বই লেখার কাজ হয়ে যায়। “ব্রায়ান ট্রেসি” নামক আমেরিকার একজন মোটিভেটর বলেছেন প্রতিদিন এক পাতা করে লিখলে ৩৬৫ দিন বা এক বছরে ৩৬৫ পাতার একটি বই লেখা সম্ভব। আর কেউ যদি ২৫ বছর ধরে লিখতে থাকেন তবে ২৫টি বই লিখতে পারবেন। যদি আপনার প্রতিদিন এক পৃষ্ঠা করে ডায়েরী লেখার অভ্যাস থাকে তবে নির্ধিধায় বলা যায় আপনি এক বছর সময়ে সহজে একটি বই লিখতে সক্ষম হবেন। নিয়ম করে প্রতিদিন কিছু কিছু লেখা ভয়ংকর কষ্টকর কাজ। তাই প্রতিদিন আপনার ডায়েরী লেখার অভ্যাস থাকলে ধরে নেয়া যায় যে বই বা আর্টিক্যাল লেখার জন্য যে ধৈর্য থাকা দরকার তা আপনার আছে। ছোট ছোট আর্টিক্যাল কিভাবে লেখা যায় তার নমুনা পাবেন articlecity dot com ইচ্ছে করলে সেখানে লেখা জমা দিয়ে শুরুটা করতে পারেন। আর বাংলায় লিখতে চাইলে প্রচুর ব্লগ আছে রেজিস্ট্রি করুন আর লিখতে শুরু করুন । এমনকি আমার মত বিনা পয়সার ব্লগ তৈরি করে আজই শুরু করতে পারেন। ডায়েরী লেখার অভ্যাস আছে সেই সাথে ইচ্ছে করুন আর লিখতে থাকুন। পাঁচ বছর পর ১৮২৫০০x৫=৯১২৫০০ শব্দ লেখার পর আশা করা যায় আপনার আশানুরূপ দক্ষতা আসবে এবং আপনার পাঠক ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকবে। চলুন আর দেরী নয় ডায়েরীতে নিজের কথা লেখার পাশাপাশি ২০০/ ৩০০ শব্দ দিয়ে যে কোন বিষয় নিয়ে লিখতে বসুন।
আমি আমার লেখা নিয়ে দুই একজনের সাথে কথা বললে তাদের একটা প্রশ্ন এই লেখালেখি করে কি কি আর্থিক লাভ হবে। আসলে যারা সময়কে অর্থের সাথে সব সময় মেলান তাদের জন্য এ লেখা নয়। কেবলমাত্র যারা মনের খোঁড়াক মিটাতে চান তারা আমার লেখা থেকে উপকার পাবেন। প্রয়াত লেখক হুমায়ুন আহমেদ টেলিভিশন সাক্ষাতকারে বলেছিলেন লেখা অনেক কষ্টকর কাজ, ধৈর্য নিয়ে লেখা তারপর ক্রমাগত সংশোধন, পরিমার্জন করে যেতে হয়। এই কষ্টকর কাজটা তিনি করেন কারণ কাজটা করতে তার ভাল লাগে। তাই যারা লিখায় আনন্দ পান তার শুরু করুন। আর যাদের টুকটাক লেখার অভ্যাস আছে তারা একটু সময় আর শৃঙ্খলাবদ্ধ হলেও নিয়মিত ২০০/৩০০ শব্দ চটপট লিখতে পারেন। আমার বর্তমান বিজিবি কুষ্টিয়া সেক্টর কমান্ডার কর্নেল ফরিদ এ পর্যন্ত দুইটি বই লিখেছেন। তিনি দু:খ করলেন, আমাদের সেনাবাহিনীর অনেক অনেক পান্ডিত্যেপূর্ন অফিসার আছেন যারা অনেক ভাল করেছেন চাকুরীজীবনে। বক্তৃতা ও লেখায় তারা সর্বদাই প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে যাচ্ছেন অথচ অজ্ঞাত কারণে তারা বই বা জার্নাল লেখার চেষ্টা করেন না। আশা করি প্রতিদিন নিয়ম করে যে কোন বিষয়ে ২০০/৩০০ করে লেখা শুরু করলেই চালু হয়ে যাবে আমাদের কলমি শক্তি।

শেয়ার করুন

0 comments: