সর্বশেষ

Monday, December 11, 2023

পলি জমিয়ে বঙ্গোপসাগর উপকূলে চর সৃষ্টির পরিকল্পনা

পলি জমিয়ে বঙ্গোপসাগর উপকূলে চর সৃষ্টির পরিকল্পনা

 

নদী ভাঙনের ফলে ভাটিতে চলে যাওয়া পলি মাটি জমানোর উচ্চাকাঙ্খী একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এ মাটি জমিয়ে নতুন করে চর সৃষ্টি করা হবে। আর নদী ভাঙনে গৃহহীনদের এ চরে পুর্নবাসন করা হবে। এ লক্ষ্যে গত জুনে নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে একটি চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। গত সপ্তাহে বার্তা সংস্থা রয়টার্স একটি প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।



জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশে ঘুর্ণিঝড়, বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে প্রতিবছর অসংখ্য লোকককে গৃহহীন হতে হচ্ছে।

পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, `কেবল নদীভাঙনের ফলে বাংলাদেশ প্রতিবছর ২০ হাজার হেক্টর (২০০ বর্গকিলোমিটার । ১০০ হেক্টর সমান ১ বর্গকিলোমিটার ) জমি হারাচ্ছে।

২০১৩ সালে শরণার্থী ও অভিবাসন বিষয়ক গবেষণা সংস্থা রামরু ও ব্রিটেনের সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সাসেক্স সেন্টার ফর মাইগ্রেশন রিসার্চ এক গবেষণায় জানিয়েছিল, প্রতিবছর নদী ভাঙনের ফলে ২ লাখ লোক গৃহহীন হয়।

 

পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা- বাংলাদেশের এই তিনটি প্রধান নদী প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণে পলিমাটি ভাটিতে বয়ে নিয়ে যায়। ঢাকার সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (সিইজিআইএস) গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতিবছর দেশের নদীগুলো একশ কোটি টন পলিমাটি বয়ে নিয়ে যায়। এর অধিকাংশই বঙ্গোপসাগর উপকূলীয় এলাকায় গিয়ে জমা হয়।

 

সিইজিআইএসের উপ-নির্বাহী পরিচালক মালিক খান জানিয়েছেন, আঁড়াআঁড়ি বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে এই পলিমাটি যদি নোয়াখালীর নিচু এলাকার দিকে নিয়ে যাওয়া যায় তাহলে সাগরে নতুন ভূমি জেগে উঠবে।

 

তিনি বলেন, ‘নদীতে বয়ে যাওয়া পলিমাটির মাধ্যমে নতুন জমি সৃষ্টি করা জরুরী।’

 

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ভাটিতে বয়ে যাওয়া পলিমাটি আঁড়াআঁড়ি বাঁধের মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে চলে যাওয়ার আগেই আটকানো সম্ভব। যেহেতু এ মাটি বাঁধের পেছনে জমা হয়, সেহেতু এটি বিশাল চর সৃষ্টি করতে পারে, যা মানুষের বসবাসের জন্য যথেষ্ঠ।

 

ঢাকাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইনিস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিংয়ের (আইডব্লিউএম) উপকূল, বন্দর ও নদী মোহনা বিভাগের পরিচালক জহিরুল হক খান জানান, নিঝুম দ্বীপ ও মনপুরা দ্বীপ এলাকায় ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি ছোট ছোট চর জেগেছে। আঁড়াআঁড়ি বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে নোয়াখালির উরির চর ও চট্টগ্রামে সন্দ্বীপ এলাকায় নদীতে বয়ে আসা প্রচুর পলিমাটির সাহায্যে কয়েকশ বর্গকিলোমিটার আয়তনের নতুন স্থলভাগ সৃষ্টি করা সম্ভব।

 

পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ জানিয়েছেন, আশা করা হচ্ছে আগামী ২০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ মোট ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার নতুন ভূমি সৃষ্টি করতে পারবে ( প্রতি বছর ৫০০ বর্গকিলোমিটার ) ।

 

তিনি বলেন, ‘প্রাকৃতিক কারণে মেঘনার মোহনায় ভাঙন অব্যাহত থাকায়, আঁড়াআঁড়ি বাঁধের মাধ্যমে সাগরে নতুন ভূমি সৃষ্টি করা গেলে নদীভাঙ্গন কবলিত মানুষ ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্তদেরকে সেখানে সহজেই পুর্নবাসন করা যাবে।

 

বাঁধ দিয়ে সংগৃহীত পলিমাটির মাধ্যমে নতুন ভূমি সৃষ্টির জন্য গত জুনে নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। নিচু অঞ্চলের দেশ হওয়ায় এ বিষয়ে নেদারল্যান্ডসের অভিজ্ঞতাও অনেক বেশি। এ চুক্তির ফলে নেদারল্যান্ডস এই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই, উন্নয়ন ও এর বাস্তবায়ন করবে।

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১২ সেপ্টেম্বর ২০১৫/শাহেদ/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৪৩, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০

শাহেদ || রাইজিংবিডি.কম


Sunday, December 10, 2023

সন্দ্বীপ উপকূলে চর, সম্ভাবনার স্বপ্নদুয়ার

সন্দ্বীপ উপকূলে চর, সম্ভাবনার স্বপ্নদুয়ার

 সন্দ্বীপের পশ্চিম উপকূল ঘেঁষে দীর্ঘ ২০ কিলোমিটার এলাকায় জেগে উঠছে নতুন চর। চরের প্রায় ২ কিলোমিটার অংশজুড়ে সবুজ উড়ির (একপ্রকার ঘাস) সমারোহ। জোয়ারের সময় দেখা না গেলেও ভাটায় স্পষ্টভাবে এর অস্তিত্বের প্রমাণ মিলছে।



দ্রুত জেগে ওঠা চরের বিশাল অংশে ‘উড়ির’ সবুজ সমারোহ এলাকার মানুষের মাঝে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। মেঘনার ভাঙনে অন্যত্র ভাড়ায় কিংবা নতুন ঘর তৈরির চিন্তা-ভাবনা করছিলেন যারা, তারা অনেকেই পুনরায় ফিরে আসছেন। যারা মেঘনার করাল গ্রাসে বাপ-দাদার ভিটেমাটি হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছিলেন, তাদের চোখে এখন আলোর ঝিলিক। হারানো ভূমি ফিরে পাওয়ার দৃঢ় আশা।

সন্দ্বীপের দীর্ঘাপাড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন টিটু বলেন, দীর্ঘাপাড় ইউনিয়ন সাগরে বিলীন হয়ে যাওয়ার পর পুনরায় জেগে উঠেছে। এর আশেপাশে যেভাবে চর জেগে উঠছে তাতে সেদিন আর দূরে নয়, অচিরে আমরা উড়িরচরসহ কোম্পানিগঞ্জের সঙ্গে মিশে যাব।

সন্দ্বীপ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাস্টার শাহজাহান বিএ বলেন, ৬০ মৌজার সন্দ্বীপ ইতোমধ্যে কয়েকটি ভাঙন থেকে উদ্ধার হয়েছে। সরকার পরিকল্পনা গ্রহণ করলে খুব দ্রুত এ এলাকায় বিশাল ভূমি জেগে উঠবে। বিশেষ করে হরিশপুর ও দীর্ঘাপাড়ের ভাঙনকবলিত মানুষ জায়গা-সম্পত্তি পুনরায় নদীবক্ষে জেগে ওঠায় আশার আলো দেখছে।

সন্দ্বীপের উত্তর-পশ্চিমে ষাটের দশকে জেগে ওঠা বিচ্ছিন্ন ইউনিয়ন উড়িরচরের দক্ষিণে জেগে উঠেছে আরও প্রায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ চর। আবার দ্বীপের পশ্চিমে চর জাহাইজ্যা (স্বর্ণদ্বীপ), চর ক্যারিং, ঠ্যাংগার চর (বর্তমানে ভাসানচর) মিলে জেগে উঠা নতুন ভূমির পরিমাণ সন্দ্বীপের প্রায় দ্বিগুণের চেয়ে বেশি হতে পারে বলে আশা করছেন স্থানীয়রা।

ভূ-উপগ্রহের চিত্র বিশ্লেষণে সংশ্লিষ্ট পর্যবেক্ষকদের ধারণা, সন্দ্বীপের পশ্চিম উপকূলে নোয়াখালী, হাতিয়া, সন্দ্বীপজুড়ে দক্ষিণ-পশ্চিমদিকে জেগে ওঠা চরগুলো আশেপাশে পলি জমে বিস্তৃত হয়ে সাগর মোহনায় সাংগু গ্যাসফিল্ডের কাছাকাছি চলে গেছে। দিন দিন এ চরের পরিধি বাড়ছে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বিগত ৫০ বছর ধরে মেঘনা মোহনায় ভূমি জাগরণের বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় এ অঞ্চলে প্রায় ৬ লাখ হেক্টর নতুন ভূমি জেগে উঠেছে। কখনও প্রকৃতির আপন খেয়ালে, আবার কখনও ক্রসবাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে এ ভূমি উদ্ধার হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের মেঘনা সমীক্ষা-২০০১ এর মতে, প্রকৃতিগতভাবে প্রতিবছর প্রায় ২ হাজার হেক্টর ভূমি এ মোহনায় জেগে উঠছে। তবে বর্তমানে এর পরিমাণ আশাতীত বেড়ে গেছে।

সন্দ্বীপের তিনপাশে গড়ে ওঠা নতুন চর ছাড়াও এর পশ্চিমে হাতিয়া দ্বীপ সংলগ্ন নিঝুম দ্বীপ, চর কবিরা, চর কালাম, চর আলীম, চর সাগরিকা, উচখালী, নিউ ঢালচরসহ প্রায় ৫ হাজার বর্গ কিলোমিটার নতুন ভূমি জেগে উঠেছে। ভূমি পুনরুদ্ধার ও চর উন্নয়ন সংস্থাগুলোর মতে, এই এলাকায় প্রতিবছর গড়ে অন্তত ১৫-২০ বর্গ কিলোমিটার নতুন চরের সন্ধান মিলছে।

জানা যায়, সাগর মোহনায় জেগে ওঠার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করাসহ এটিকে ব্যবহারোপযোগী করে তুলতে সরকারের ভূমি পুনরুদ্ধার প্রকল্পে মেঘনা মোহনা অনুসন্ধান, চর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট প্রজেক্ট, সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সার্ভিস, ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিংসহ আরও কয়েকটি সরকারি সংস্থা কাজ করছে। তাদের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে সরকারের আরও ছয়টি বিভাগ-এলজিইডি, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল, কৃষি, ভূমি, বন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। সন্দ্বীপের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ইউনিয়ন উড়িরচরের পশ্চিমে সৃষ্ট নতুন চরে হেঁটে চরলক্ষ্মী যাওয়া যায়। জাহাইজ্যা বা স্বর্ণদ্বীপ থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার দক্ষিণে ভাসানচরে (ঠ্যাংগার চর) এখন চলছে রোহিঙ্গা স্থানান্তরের বিশাল কর্মযজ্ঞ।

জেগে ওঠা ভূমির স্থায়িত্ব সম্পর্কে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সাইন্স অ্যান্ড ফিশারিজ ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মোসলেম উদ্দিন মুন্না জয়নিউজকে বলেন, সন্দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিমের ঠ্যাংগার চর (ভাসান চর) বয়ে আসা ¯্রােতধারার লোড নিচ্ছে। এর ফলে দ্বীপের পশ্চিমে ফুলে ওঠা বিশাল ভূমি টিকেও যেতে পারে। তবে ভূমি উদ্ধারে সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোকে পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি হার্ড ও সফট ইঞ্জিনিয়ারিং কৌশল প্রয়োগ করে সংরক্ষণের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বর্তমানে কুতুবদিয়াতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তিনি ভূমি সংরক্ষণে সন্দ্বীপ চ্যানেলে স্বল্প পরিসরে ড্রেজিংয়ের প্রয়োজনীয়তার কথাও উল্লেখ করেন।

জেগে ওঠা নতুন ভূমি খুলে দিচ্ছে সম্ভাবনার স্বপ্নদুয়ার। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ভূমি সংরক্ষণ বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে উদ্যোগ নিতে হবে। নতুন ভূমি সংরক্ষণ সম্ভব হলে বদলে যাবে দেশের মানচিত্র। তাতে উদ্বাস্তু ও ভূমিহীনদের পুনর্বাসনসহ কৃষি ও পশুপালনক্ষেত্রে বিশাল সুযোগ সৃষ্টি হবে।

জয়নিউজ/আরসি