নদী ভাঙনের ফলে ভাটিতে চলে যাওয়া পলি মাটি জমানোর উচ্চাকাঙ্খী একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এ মাটি জমিয়ে নতুন করে চর সৃষ্টি করা হবে। আর নদী ভাঙনে গৃহহীনদের এ চরে পুর্নবাসন করা হবে। এ লক্ষ্যে গত জুনে নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে একটি চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। গত সপ্তাহে বার্তা সংস্থা রয়টার্স একটি প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশে ঘুর্ণিঝড়, বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে প্রতিবছর অসংখ্য লোকককে গৃহহীন হতে হচ্ছে।
পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, `কেবল নদীভাঙনের ফলে বাংলাদেশ প্রতিবছর ২০ হাজার হেক্টর (২০০ বর্গকিলোমিটার । ১০০ হেক্টর সমান ১ বর্গকিলোমিটার ) জমি হারাচ্ছে।
২০১৩ সালে শরণার্থী ও অভিবাসন বিষয়ক গবেষণা সংস্থা রামরু ও ব্রিটেনের সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সাসেক্স সেন্টার ফর মাইগ্রেশন রিসার্চ এক গবেষণায় জানিয়েছিল, প্রতিবছর নদী ভাঙনের ফলে ২ লাখ লোক গৃহহীন হয়।
পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা- বাংলাদেশের এই তিনটি প্রধান নদী প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণে পলিমাটি ভাটিতে বয়ে নিয়ে যায়। ঢাকার সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (সিইজিআইএস) গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতিবছর দেশের নদীগুলো একশ কোটি টন পলিমাটি বয়ে নিয়ে যায়। এর অধিকাংশই বঙ্গোপসাগর উপকূলীয় এলাকায় গিয়ে জমা হয়।
সিইজিআইএসের উপ-নির্বাহী পরিচালক মালিক খান জানিয়েছেন, আঁড়াআঁড়ি বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে এই পলিমাটি যদি নোয়াখালীর নিচু এলাকার দিকে নিয়ে যাওয়া যায় তাহলে সাগরে নতুন ভূমি জেগে উঠবে।
তিনি বলেন, ‘নদীতে বয়ে যাওয়া পলিমাটির মাধ্যমে নতুন জমি সৃষ্টি করা জরুরী।’
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ভাটিতে বয়ে যাওয়া পলিমাটি আঁড়াআঁড়ি বাঁধের মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে চলে যাওয়ার আগেই আটকানো সম্ভব। যেহেতু এ মাটি বাঁধের পেছনে জমা হয়, সেহেতু এটি বিশাল চর সৃষ্টি করতে পারে, যা মানুষের বসবাসের জন্য যথেষ্ঠ।
ঢাকাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইনিস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিংয়ের (আইডব্লিউএম) উপকূল, বন্দর ও নদী মোহনা বিভাগের পরিচালক জহিরুল হক খান জানান, নিঝুম দ্বীপ ও মনপুরা দ্বীপ এলাকায় ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি ছোট ছোট চর জেগেছে। আঁড়াআঁড়ি বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে নোয়াখালির উরির চর ও চট্টগ্রামে সন্দ্বীপ এলাকায় নদীতে বয়ে আসা প্রচুর পলিমাটির সাহায্যে কয়েকশ বর্গকিলোমিটার আয়তনের নতুন স্থলভাগ সৃষ্টি করা সম্ভব।
পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ জানিয়েছেন, আশা করা হচ্ছে আগামী ২০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ মোট ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার নতুন ভূমি সৃষ্টি করতে পারবে ( প্রতি বছর ৫০০ বর্গকিলোমিটার ) ।
তিনি বলেন, ‘প্রাকৃতিক কারণে মেঘনার মোহনায় ভাঙন অব্যাহত থাকায়, আঁড়াআঁড়ি বাঁধের মাধ্যমে সাগরে নতুন ভূমি সৃষ্টি করা গেলে নদীভাঙ্গন কবলিত মানুষ ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্তদেরকে সেখানে সহজেই পুর্নবাসন করা যাবে।
বাঁধ দিয়ে সংগৃহীত পলিমাটির মাধ্যমে নতুন ভূমি সৃষ্টির জন্য গত জুনে নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। নিচু অঞ্চলের দেশ হওয়ায় এ বিষয়ে নেদারল্যান্ডসের অভিজ্ঞতাও অনেক বেশি। এ চুক্তির ফলে নেদারল্যান্ডস এই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই, উন্নয়ন ও এর বাস্তবায়ন করবে।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/১২ সেপ্টেম্বর ২০১৫/শাহেদ/শাহনেওয়াজ
রাইজিংবিডি.কম
প্রকাশিত: ০৯:৪৩, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৫ আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শাহেদ || রাইজিংবিডি.কম